ছাত্র জনতার আন্দোলন শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে (গত ১৪ জুলাই) গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাসার কাজ করে গেছে পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। এটা বাস্তব কথা। কী করে বানাল এই টাকা। যখন আমি জেনেছি, তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তার এই বক্তব্যের পরই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কোটিপতি পিয়নকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে খাওয়ার পানি সরবরাহ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী বলে পরিচয় দেয়া শুরু করেন। এই পরিচয় ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের পদ, বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করেন জাহাঙ্গীর।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ। বাগিয়েছেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতির পদ। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ৪০০ কোটি টাকার সম্পদসহ গাড়ি–বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী–১ আসন (চাটখিল–সোনাইমুড়ী) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জাহাঙ্গীরের নামে নিজ এলাকায় ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষি জমি, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান, মিরপুরে ৭ তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে পৈতৃক ভিটায় চারতলা বাড়ি রয়েছে বলে জানা যায়। পাশাপাশি তার পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে নোয়াখালী শহর মাইজদীর হরিনারায়ণপুর এলাকায়। এর ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়া দেয়া আছে। এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিকও তিনি।
দেশে সম্পত্তির পাহাড় গড়ার পাশাপাশি জাহাঙ্গীর আলম হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলেও জানতে পেরেছে সিআইডি।
এছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে চজাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহারের মালিকানাধীন ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ২ হাজার ৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ১টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসায় মূলধন ৭৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে জাহাঙ্গীরের নগদ ও ব্যাংকের গচ্ছিত মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ডিপিএস ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ফার্মে মূলধন ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার তথ্য পাওয়া যায়।