আমরা জানি, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে। আমরা এমন অনেকেই আছি যারা জীবনের একটি বড় সময় বিভিন্ন হেলা অজুহাতে নামাজ আদায় করিনি। এখন চিন্তা করছি, জীবনের কাজা করা নামাজ কীভাবে আদায় হবে? তওবা বা কাফফারা কি প্রকৃত অর্থে কোনো সমাধান?
জীবনে না পড়া নামাজের জন্য তওবা কোনো সমাধান নয়। বরং কাজা আদায় করতেই হবে। এ কারণেই হাদিসে দেখা যায়, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ কাজা হলে তা আদায় করে নিতেন ও অন্যকে আদায় করতে বলতেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا، لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ অর্থ: কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেয়। কেননা, তার কাফ্ফারা একমাত্র সেই নামাজই। (মুসলিম: ৬৮৪)
ঈমান আনার পর বান্দার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নামাজ আদায় করা। আর নামাজের রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালা যার আলোকে বান্দাকে নামাজ আদায় করতে হয়। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, সব আলেম এ কথার ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন যে জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করলে তা কাজা করা জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি: ১/১৭৮)
জিম্মায় ৬ ওয়াক্ত নামাজের কম কাজা থাকলে করণীয়ঃ
কোনো মুসলমানের জিম্মায় ৬ ওয়াক্ত নামাজের কম কাজা থাকলে ফিকহের পরিভাষায় তাকে “সাহেবে তারতিব” বলা হয়। এরকম ব্যক্তির ওপর সিরিয়াল ঠিক রাখা আবশ্যক। অর্থাৎ আগে কাজা নামাজ আদায় করতে হবে তারপর ওয়াক্তিয়া আদায় করবে। কাজার ক্ষেত্রেও তাকে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
সেই হিসেবে কাজা নামাজ আদায় করার আগেই যদি পরবর্তী নামাজের সময় হয়ে যায় তাহলে প্রথমে কাজা আদায় করা আবশ্যক। তারপর ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করবে। আর যদি ৬ ওয়াক্ত থেকে বেশি নামাজ কাজা হয়ে থাকে, তাহলে তারতিব বা সিরিয়াল রক্ষা করা জরুরি নয়। সুতরাং সে কাজা আদায় না করেই নতুন আসা ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে পারবে। ব্যতিক্রম করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে। (আলমুহিতুল বুরহানি: ২/৩৪৭-৩৫০; আল বাহরুর রায়েক: ২/৮০; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১২২; ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১২১; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৫৬০-৫৬৩)
জিম্মায় থাকা কাজা নামাজের সঠিক হিসাব জানা না থাকলে করণীয়ঃ
প্রথমে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে বালেগ হওয়ার পর থেকে ছুটে যাওয়া ওয়াক্তগুলোর ফরজ নামাজ এবং বিতির নামাজ কী পরিমাণ তার একটি হিসাব বের করতে হবে। এরপর উক্ত নামাজগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন- ‘আমার জিম্মায় থাকা প্রথম ফজর (উদাহরণস্বরূপ) নামাজের কাজা পড়ছি’। এভাবে প্রত্যেক নামাজের জন্য নিয়ত করে এ কাজা নামাজগুলো পড়তে থাকবেন। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত এ নামাজগুলো কাজা করার কারণে আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা-ইস্তেগফার করবেন। (আততাজনিস ওয়াল মাজিদ: ২/৬৯; মুখতারাতুন নাওয়াজেল: ১/৩৪৯; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃ-২৪৩)
প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাজা আদায় করলেও সমস্যা নেই। এছাড়া সুবিধামতো যখন যে নামাজের কাজা আদায়ের সুযোগ হবে, তখনই তা আদায় করা যাবে। সুন্নত নামাজের কাজা নেই, কেবল ফরজ ও বিতিরের নামাজেরই কাজা আদায় করা যায়। (বুখারি: ৫৯৬; আল ইসতিজকার: ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৬৮; ফতোয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৩২)
মৃত্যুর আগে কাজা নামাজের ফিদিয়া দেয়ার অসিয়ত করা জরুরি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, নামাজের ফিদিয়া কী? নামাজের ফিদিয়া হলোঃ প্রতিদিনকার কাজা করা বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা, প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরিবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতর এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৭২)