ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, তবে এখানে দারিদ্র্যের বিভিন্ন রূপ এখনও প্রকট। নগরায়ণ ও আধুনিকায়নের কারণে ঢাকার কিছু অংশ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে এলেও, শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
শহুরে দারিদ্র্যের চিত্র
ঢাকার শহর অঞ্চলে বস্তি এলাকার মানুষ দারিদ্র্যের প্রধান ভুক্তভোগী। রাজধানীতে প্রায় ৪,০০০ বস্তি রয়েছে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ অমানবিক পরিবেশে বসবাস করছে। বস্তিবাসীরা নিম্নমানের কাজের উপর নির্ভরশীল, যেমন গৃহকর্ম, নির্মাণশ্রমিক, বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। এই কাজগুলোর আয় অত্যন্ত কম, যা তাদের ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ।
বস্তি এলাকায় স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ অপ্রতুল। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে এই জনগোষ্ঠী চরমভাবে পিছিয়ে পড়ে।
গ্রামীণ ঢাকায় দারিদ্র্য
ঢাকা বিভাগের গ্রামীণ এলাকাগুলো, যেমন মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বা গাজীপুর, শহরের তুলনায় তুলনামূলক কম উন্নত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী এবং অনেকেই ভূমিহীন। ফসলের উৎপাদন কমে গেলে বা বাজারমূল্য কমে গেলে এই মানুষগুলো সহজেই দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব দারিদ্র্যের একটি বড় কারণ।
দারিদ্র্যের কারণ
ঢাকা বিভাগের দারিদ্র্যের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে:
- অর্থনৈতিক বৈষম্য: শহর ও গ্রামের মধ্যে আর্থিক সুযোগের বড় পার্থক্য রয়েছে। ঢাকার মূল শহরে অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও, সেই সুবিধা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি।
- জনসংখ্যার চাপ: ঢাকায় দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে আসে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ঢাকা বিভাগে বন্যা একটি সাধারণ সমস্যা। প্রতি বছর বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চলে বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং মানুষের জীবিকা সংকটে পড়ে।
- শিক্ষার ঘাটতি: ঢাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেরই প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নেই। ফলে তারা ভালো চাকরি পায় না, এবং দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকা পড়ে।
সম্ভাব্য সমাধান
ঢাকা বিভাগের দারিদ্র্য মোকাবেলায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো কার্যকর হতে পারে:
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য সরকারের খাদ্য সহায়তা, নগদ অর্থ প্রদান, এবং আবাসন প্রকল্প আরও বিস্তৃত করা।
- শিক্ষার প্রসার: প্রান্তিক অঞ্চলে স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং কম খরচে শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা।
- স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি: বস্তি এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিনামূল্যে বা কম খরচে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা।
- কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করে স্থানীয় পর্যায়ে চাকরির সুযোগ বাড়ানো।
উপসংহার
ঢাকা বিভাগে দারিদ্র্যের অবসান সহজ কাজ নয়, তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর উদ্যোগ দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে একটি স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দিতে পারে।